আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা - | NCTB BOOK

এ অধ্যায়ের শেষে আমরা ধারণা নিতে পারব - 

■ আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গের অর্থ; 

■ আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ কী কী 

■ আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গের সংক্ষিপ্ত পরিচয়; 

■ আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলনের উপকারিতা।

একদিন বিকেলে ধর্মকথা শোনার জন্য পাঁচ বন্ধু বিহারে যায়। তারা বিহারে গিয়ে প্রথমে প্রদীপ ও ধূপবাতি জ্বালিয়ে বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ বন্দনা করে। এরপর তারা বিহারের ভিক্ষুকে বন্দনা নিবেদন করে ধর্মকথা শোনানোর জন্য অনুরোধ করেন। ভিক্ষু আনন্দমনে তাদের অনুরোধ রক্ষা করেন এবং তাদের নানা রকম ধর্মকথা শোনাতে থাকেন। কিন্তু তিনি লক্ষ করলেন চার বন্ধু মনোযোগ দিয়ে ধর্মকথা শুনলেও একজন অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। কারণ জিজ্ঞাসা করে ভিক্ষু জানতে পারলেন, তার পিতা খুবই অসুস্থ। তাই তার মন ভালো নেই। তখন ভিক্ষু বললেন : মানুষ জীবনে নানা রকম দুঃখ ভোগ করে। অসুখ হলে দুঃখ পায়। বৃদ্ধ হলে দুঃখ পায়। প্রিয় বিচ্ছেদ হলে দুঃখ পায়। কটু কথা শুনলে দুঃখ পায়। শারীরিক আঘাত পেলে দুঃখ পায়। তবে দুঃখ হতে মুক্তির উপায়ও আছে। যেমন, একদিন রূপেন বাবুর খুব জ্বর হয়েছিল। কিছুতেই জ্বর সারছিল না। জ্বরের কারণে তিনি খেতে পারছিলেন না। ঘুমাতে পারছিলেন না। বমি করছিলেন এবং শরীরে ব্যথা অনুভব করছিলেন।

তিনি অনেক কষ্ট পাচ্ছিলেন। পরিবারের লোকজন তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ডাক্তার জানতে পারলেন যে, রূপেন বাবু ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। রোগের কারণ জেনে ডাক্তার তাকে ম্যালেরিয়া রোগের ওষুধ খেতে দিলেন। ডাক্তারের পরামর্শ মতো রূপেন বাবু নিয়মিত ওষুধ খেলেন। কিছুদিন পর তাঁর জ্বর সেরে গেল এবং তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। আবার আগের মতো রূপেন বাবু কাজ করতে লাগলেন। এ ঘটনা হতে বোঝা যায় যে, শারীরিক দুঃখের কারণ এবং মুক্তির উপায় জানলে দুঃখ হতে মুক্তি লাভ করা যায়। বুদ্ধ বলেছেন, মানব জীবনে দুঃখ আছে। দুঃখের কারণ আছে এবং দুঃখ মুক্তির উপায়ও আছে। তিনি আরো বলেছেন, মানুষ নিজের চেষ্টায় দুঃখ হতে মুক্ত থাকতে পারে। দুঃখ মুক্তির উপায় হিসেবে বুদ্ধ আর্য- অষ্টাঙ্গিক মার্গ দেশনা করেছেন এবং দুঃখ মুক্ত থাকার জন্য তিনি মানুষকে আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলনের উপদেশ দিয়েছেন। আজ আমি তোমাদের আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ সম্পর্কে বলবো। প্রথমে তিনি আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গের অর্থ এবং আটটি মার্গ কী কী তা বললেন। এরপর, তিনি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করলেন আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গের পরিচয়। শেষে তিনি আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলনের উপকারিতা বর্ণনা করেন।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ১৬

তোমার দেখা একজন অসুস্থ ব্যক্তি দুঃখ-কষ্ট সম্পর্কে নিচে লেখো।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ১৭

তুমি মানুষকে কী কী ধরনের দুঃখ পেতে দেখেছ, তার একটি তালিকা তৈরি করো।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ১৮

আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ কী, তা দলে আলোচনা করো।

আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ :

‘আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গের’ ‘আর্য’ শব্দের অর্থ হলো শ্রেষ্ঠ, উত্তম, পরিশুদ্ধ। অষ্টাঙ্গিক হলো আটটি অঙ্গ। আর ‘মার্গ’ শব্দের অর্থ হলো পথ বা উপায়। অতএব, আটটি অঙ্গ সমন্বিত উত্তম (শ্রেষ্ঠ) পথ (উপায়) হলো আর্য- অষ্টাঙ্গিক মার্গ । আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ মধ্যম পথ নামেও পরিচিত। এই আটটি পথ হলো :

১. সম্যক দৃষ্টি৫. সম্যক জীবিকা
২. সম্যক সংকল্প৬. সম্যক স্মৃতি
৩. সম্যক বাক্য৭. সম্যক ব্যায়াম বা প্রচেষ্টা এবং
৪. সম্যক কর্ম৮. সম্যক সমাধি।

 

আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

১. সম্যক দৃষ্টি : ‘সম্যক’ শব্দের অর্থ হলো সঠিক, সত্য বা অভ্রান্ত। আর ‘দৃষ্টি’ শব্দের অর্থ দেখা, বোঝা, ধারণা করা, উপলব্ধি করা ইত্যাদি। অতএব, সম্যক দৃষ্টির অর্থ হলো কোনো কিছু সঠিকভাবে দেখা, বোঝা বা উপলব্ধি করা। জীবন ও জগতকে সঠিকভাবে দেখা বা বোঝাই হলো সম্যক দৃষ্টি। সম্যক দৃষ্টির অভাবের কারণে মানুষ জীবন ও জগতের প্রকৃত স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য বুঝতে পারে না। জীবন ও জগতের সঠিক স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য জানি না বলেই আমরা দুঃখ পাই। যেমন, একটি প্রিয় খেলনা ভেঙে গেলে আমরা দুঃখ পাই। একটি প্রিয় পোষা প্রাণী বা প্রিয়জন মারা গেলেও আমরা দুঃখ পাই। কিন্তু সকল বস্তুই একদিন না একদিন ধ্বংস হয়। সকল মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদের - একদিন মৃত্যু হয়। এটিই বস্তু এবং প্রাণীর প্রকৃত স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য। আমরা বস্তু এবং জীবের প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারি না বলেই শোক-দুঃখে জর্জরিত হয়ে পড়ি।

জগতের স্বরূপ হলো দুঃখময়তা। জীবনে সকল মানুষ বা প্রাণী কোনো না কোনো দুঃখ ভোগ করে। তবে সেই দুঃখের কারণ আছে, সেই দুঃখ নিরোধ করা যায় এবং সেই দুঃখ নিরোধের উপায়ও আছে।

এই চার আর্যসত্যকে জানা বা উপলব্ধি করাই হলো সম্যক দৃষ্টি। সম্যক দৃষ্টির অভাবে মানুষ লোভ-তৃষ্ণার বশবর্তী হয়ে এবং কুশল-অকুশল কর্ম চিনতে পারে না। লোভ-তৃষ্ণার কারণেই মানুষ নানারকম অকুশল কর্মে জড়িত হয়। ফলে নানা রকম দুঃখ ভোগ করে। যে ব্যক্তি সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন তিনি সর্বদা অকুশল কর্ম হতে বিরত থাকেন এবং কুশল কর্ম সম্পাদন করেন। এছাড়া, তিনি জীবন ও জগতের প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন। ফলে তিনি দুঃখমুক্ত থাকতে পারেন।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ১৯

সম্যক দৃষ্টি বলতে তুমি কী বোঝ নিজের ভাষায় লেখো।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

২. সম্যক সংকল্প : ‘সংকল্প’ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রতিজ্ঞা, পণ, শপথ ইত্যাদি। সুতরাং সম্যক সংকল্পের অর্থ হলো সঠিক বা উত্তম প্রতিজ্ঞা বা উত্তম শপথ। মানুষ নানা রকম সংকল্প করে। কেউ ডাক্তার-নার্স হয়ে মানুষের সেবা করার সংকল্প করে। কেউ প্রকৌশলী হয়ে মানুষের ব্যবহারের জন্য নানা কিছু উদ্ভাবনের সংকল্প করে। কেউ কৃষক হয়ে শস্য উৎপাদনের সংকল্প করে। আবার কেউ ধর্মপ্রচারক হয়ে মানুষকে ধার্মিক বানানোর সংকল্প করে। বৌদ্ধদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাণ লাভ করা। তাই সকল বৌদ্ধ বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি নির্বাণ লাভের সংকল্প করে। নির্বাণ লাভ হলে সকল প্রকার দুঃখ হতে মুক্ত হওয়া যায়। নির্বাণ লাভের জন্য প্রত্যেক মানুষকে লোভ, দ্বেষ, মোহ এবং তৃষ্ণা ক্ষয় করতে হয়। দশ পারমী পূর্ণ করতে হয়।

দশ পারমী সম্পর্কে আমরা উচ্চ শ্রেণিতে পড়ব। এছাড়া অকুশল কর্ম বর্জন ও কুশল কর্ম চর্চা করতে হয়। মৈত্রী ও করুণাপরায়ণ হতে হয়। অপরের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে হয় এবং সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনা করতে হয়। অতএব, নিজের ও পরের মঙ্গলের জন্য এবং নির্বাণ লাভের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়াকে সম্যক সংকল্প বলে।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ২০

তুমি কি কোনো সংকল্প করেছ? তোমার সংকল্প সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লেখ।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

৩. সম্যক বাক্য : সঠিক, যথার্থ, গ্রহণযোগ্য এবং উপযুক্ত বাক্যই হচ্ছে সম্যক বাক্য। মিথ্যা, কর্কশ, অর্থহীন এবং অপ্রয়োজনীয় বৃথা বাক্য বলা উচিত নয়। এসব বাক্য মানুষের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে। মানুষকে দুঃখ দেয়। তাই এরকম বাক্য বলা থেকে বিরত থেকে সঠিক, উপযুক্ত, অর্থপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য, সুভাষিত এবং সত্য বাক্য বলা উচিত। সম্যক বাক্য দ্বারা সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়, মানুষ সুখী এবং খুশী হয়। বুদ্ধ সম্যক বাক্য বলার উপদেশ দিয়েছেন।

৪. সম্যক কর্ম : সঠিক এবং কুশল কর্মকে বলে সম্যক কর্ম। দান করা, সেবা করা, পরের উপকার করা, বৃক্ষ রোপণ করা, ধর্মকথা শোনা, ধ্যান-সমাধি চর্চা করা, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা, পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা প্রভৃতি সম্যক কর্ম। সম্যক কর্ম সর্বদা নিজের এবং অপরের কল্যাণ সাধন করে। অপরদিকে, চুরি, হত্যা, আঘাত, নেশাদ্রব্য গ্রহণ, পরিবেশ দূষণ করা, কটু কথা বলা প্রভৃতি অকুশল কর্ম। অকুশল কর্ম নিজের এবং অপরের ক্ষতি সাধন করে। মানুষকে দুঃখ দেয়। সকল প্রকাশ অকুশল কর্ম থেকে বিরত থেকে কুশল কর্ম করাই হচ্ছে সম্যক কর্ম।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ২১

সম্যক কর্ম ও মন্দ কর্মের একটি তালিকা তৈরি করো।

সম্যক কর্মের তালিকামন্দ কর্মের তালিকা

৫. সম্যক জীবিকা : যে কাজ করে মানুষ জীবন ধারণ করে তাকে জীবিকা বলে। বৌদ্ধধর্ম অনুসারে, নৈতিক, মানবিক এবং মঙ্গলময় কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করাকে বলে সম্যক জীবিকা । মানুষ এবং প্রাণীকুলের জন্য উপকারী জীবিকা উত্তম জীবিকা। এরকম জীবিকা গ্রহণ করা উচিত। যে কাজ মানুষ এবং প্রাণীকুলের ক্ষতি সাধন করে তা হীন জীবিকা। হীন জীবিকা গ্রহণ করা উচিত নয়। বুদ্ধ মানুষ এবং প্রাণীকুলের জন্য ক্ষতিকারক পাঁচ প্রকার বাণিজ্য পরিহার করতে বলেছেন। এই পাঁচ প্রকার বাণিজ্য হলো : অস্ত্র, বিষ, প্রাণী, মাংস এবং নেশাদ্রব্য বাণিজ্য। এই বাণিজ্যগুলো মানুষের নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি নষ্ট করে। সম্পর্ক ও সম্প্রীতি নষ্ট করে। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। বুদ্ধ সর্বদা সৎ বাণিজ্য এবং কর্ম দ্বারা জীবিকা নির্বাহের উপদেশ দিয়েছেন।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ২২

কয়েকটি সৎ ও মন্দ জীবিকার নাম লেখ। তুমি কোন ধরনের জীবিকা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক এবং কেন তা নিচে লেখ।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

৬. সম্যক ব্যায়াম : ‘ব্যায়াম’ শব্দের অর্থ হলো প্রচেষ্টা, উদ্যোগ, উদ্যম ইত্যাদি। সুতরাং সম্যক ব্যায়াম হলো সৎ বা উত্তম প্রচেষ্টা। উদ্যম বা প্রচেষ্টা ছাড়া মানুষ কোনো কাজেই সফলতা লাভ করতে পারে না। মানুষের মন চঞ্চল, অস্থির; ভালো এবং মন্দ উভয় প্রকার কর্মে আকৃষ্ট হয়। মনকে সংযত রেখে এবং সুপথে পরিচালিত করে কল্যাণকর কাজ করার প্রচেষ্টাকে বলা হয় সম্যক ব্যায়াম। বুদ্ধ মানুষকে চার প্রকার প্রচেষ্টা বা সম্যক ব্যায়াম অনুশীলনের উপদেশ দিয়েছেন। সেগুলো হলো :

১) উৎপন্ন পাপ বা অসৎ কর্ম বিনাশের প্রচেষ্টা;

২) অনুৎপন্ন পাপ বা অসৎ কর্ম উৎপন্ন না করার প্রচেষ্টা;

৩) অনুপন্ন পুণ্য বা সৎকর্ম উৎপন্নের প্রচেষ্টা এবং

৪) উৎপন্ন পুণ্য বা সৎকর্ম রক্ষা ও বৃদ্ধির প্রচেষ্টা।

এই চার প্রকার প্রচেষ্টা মানুষকে পাপ কর্ম করা থেকে বিরত রাখে এবং পাপ কর্ম বিনাশে সহায়তা করে। অপরদিকে, যে পুণ্যকর্ম করা হয়নি তা করার জন্য এবং অর্জিত পুণ্য রক্ষা ও বৃদ্ধির জন্য উদ্বুদ্ধ করে।

৭. সম্যক স্মৃতি : ‘স্মৃতি' শব্দের অর্থ স্মরণ, পুনরায় জানা, মনের সজাগ অবস্থা, ধারণাশক্তি, মনের সচেতনতা, স্মরণ রাখার ক্ষমতা, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি। সুতরাং সম্যক স্মৃতি হলো সৎ বা কুশল কর্ম ভালোভাবে বা বারবার স্মরণ করা বা পর্যবেক্ষণ করা। মানুষ অনেক কুশল কর্ম সম্পাদন করে। কিন্তু স্মরণ না করার কারণে সেগুলো মনে থাকে না। আবার অনেক অকুশল কর্মের কথা বারবার মনে ভেসে উঠে। কুশল কর্মের স্মৃতি মনে পড়লে আরো কুশল কর্ম করার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। তেমনি, অকুশল কর্মের স্মৃতি মনে পড়লে আরো অকুশল কর্ম করার ইচ্ছা জাগতে পারে। কুশল কর্মকে বারবার স্মরণ করা এবং অকুশল কর্ম স্মরণে না আসার চেষ্টাকে সম্যক স্মৃতি বলে। স্মৃতিহীন মানুষ মাঝিবিহীন নৌকার মতো। মাঝি ছাড়া নৌকা লক্ষ্যে পৌছাতে পারে না। যেখানে সেখানে বিপদগ্রস্ত হয়। তেমনি সম্যক স্মৃতিহীন মানুষ সফলতা পায় না। অকুশল কর্মে জড়িত হয়ে নানা রকম দুঃখ কষ্ট ভোগ করে এবং নির্বাণ লাভে ব্যর্থ হয়। সম্যক স্মৃতি শুভ চিন্তাকে জাগিয়ে রাখে, অশুভ চিন্তাকে বাধা দেয়। তাই আমাদের সম্যক স্মৃতি অনুশীলন করা উচিত।

৮. সম্যক সমাধি : ‘সমাধি' শব্দের অর্থ হলো একাগ্রতা, ধ্যান, মনের একাগ্র অবস্থা ইত্যাদি। ভালোভাবে মনের বা চিত্তের একাগ্রতা সাধন হলো সম্যক সমাধি । মন চঞ্চল ও সর্বদা অস্থির থাকে। লাভ-অলাভ, ন্যায়- অন্যায়, পাপ-পুণ্য, যশ-অযশ প্রভৃতি বিচার না করে মন সব জায়গায় যেতে চায়। মন মানুষকে পরিচালিত করে। যারা মনকে সংযত করতে পারে না তারা নানা রকম খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। ফলে নানা রকম দুঃখ ভোগ করে। মনের একাগ্রতা সাধন করতে না পারলে বা মনোযোগ সহকারে না করলে কোনো কাজেই সফলতা পাওয়া যায় না। বুদ্ধ সমাধি চর্চার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। সমাহিত চিত্ত ছাড়া নির্বাণ লাভ করা সম্ভব নয়। তাই সকলের সমাধি চর্চা করা উচিত।

আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলনের উপকারিতা

আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলনের উপকারিতা অনেক। প্রথম মার্গ ‘সম্যক দৃষ্টি' অনুশীলনকারী ব্যক্তির মধ্যে সঠিক জ্ঞান বা উপলব্ধি হয় এবং ভুল ধারণা দূর হয়। ফলে তার মধ্যে লোভ-দ্বেষ-মোহ উৎপন্ন হতে পারে না। তিনি জীব-জগতের প্রকৃত স্বরূপ, কুশল-অকুশল এবং সত্য-মিথ্যা প্রভৃতি বুঝতে পারেন। তিনি জানতে পারেন, জগতে যা কিছু উৎপন্ন হয় তা বিনাশধর্মী। দ্বিতীয় মার্গ ‘সম্যক সংকল্প' অনুশীলনকারী ব্যক্তি খারাপ কাজ এবং লোভ-দ্বেষ-মোহ ত্যাগ, সৎ কর্ম সম্পাদন এবং নির্বাণ লাভের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। তৃতীয় মাৰ্গ ‘সম্যক বাক্য' অনুশীলনকারী ব্যক্তি কর্কশ, মিথ্যা, বৃথা বাক্য প্রভৃতি বলা এবং পরনিন্দা থেকে বিরত থেকে সুভাষিত ও অর্থপূর্ণ বাক্য বলতে উদ্বুদ্ধ হন। চতুর্থ মার্গ ‘সম্যক কর্ম’ অনুশীলনকারী ব্যক্তি অকুশল কর্ম পরিত্যাগ করে কুশল কর্ম সম্পাদনে অনুপ্রাণিত হন। পঞ্চম মার্গ ‘সম্যক জীবিকা’ অনুশীলনকারী ব্যক্তি খারাপ বা হীন জীবিকা ত্যাগ করে সৎ জীবিকার মাধ্যমে জীবন নির্বাহে সচেষ্ট হন। ষষ্ঠ মার্গ ‘সম্যক ব্যায়াম' চর্চাকারী ব্যক্তি অসৎ কর্ম বিনাশ ও উৎপন্ন না হওয়ার জন্য এবং সৎ কর্ম উৎপন্ন ও বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। সপ্তম মার্গ ‘সম্যক স্মৃতি’ অনুশীলনকারী ব্যক্তি সর্বদা কুশল স্মৃতি জাগ্রত রাখেন। ফলে তাঁর মনে অকুশল চিন্তাভাবনা উদয় হতে পারে না। অষ্টম মার্গ ‘সম্যক সমাধি' অনুশীলনকারী ব্যক্তির চিত্ত বা মন সর্বদা সংযত ও সমাহিত থাকে। ফলে তিনি যে কোনো কাজ সঠিকভাবে করতে পারেন।

নির্বাণ লাভের জন্য শীল, সমাধি এবং প্রজ্ঞার অনুশীলন একান্ত প্রয়োজন। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গের মধ্যে সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম ও সম্যক জীবিকা শীলের অন্তর্গত, যা নৈতিক ও মানবিক জীবন গঠনে সহায়তা করে। সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি এবং সম্যক সমাধি সমাধির অন্তর্গত, যা চিত্ত বা মনের উৎকর্ষ ও একাগ্রতা সাধন করে। সম্যক দৃষ্টি ও সম্যক সংকল্প প্রজ্ঞার অন্তর্গত, যার অনুশীলনে প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়। এতে বোঝা যায়, আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলনে নির্বাণ লাভ করা সম্ভব। নির্বাণ লাভকারী ব্যক্তি সকল প্রকার দুঃখ হতে মুক্ত থাকেন। বুদ্ধ বলেছেন, নির্ব্বাণং পরমং সুখং। অর্থাৎ নির্বাণ পরম সুখ। অতএব, পরম সুখকর নির্বাণ লাভের জন্য সকলের আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলন করা উচিত।

আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ সম্পর্কে জেনে পাঁচ বন্ধু বুঝতে পারল, জগত দুঃখময়। জগতে দুঃখ আছে, দুঃখের কারণ আছে, দুঃখ নিরোধ করা সম্ভব এবং দুঃখ নিরোধের উপায় আছে। আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ হচ্ছে দুঃখ নিরোধের উপায়। আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলন করলে দুঃখ হতে মুক্ত থাকা যায়। এজন্য, তারা আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলন করে নির্বাণ লাভের প্রতিজ্ঞা করেন।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ২৩

আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গের কোন কোন মার্গ তুমি অনুশীলন করো এবং তোমার জীবনে এর ফলাফল সম্পর্কে একটি ৫০০ শব্দের অভিজ্ঞতা প্রতিবেদন (Experiential learning report) লেখো।অনুগ্রহ করে ক্লাস শিক্ষকের কাছে জমা

 
 
 
 
 
 
 

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ২৪

অভিজ্ঞতা প্রতিবেদন (Experiential Learning Report) লেখা অভিজ্ঞাতাটি সম্পর্কে তোমার লিখিত মতামত দাও।

 
 
 
 
 
 
 

 

                                        অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন কার্যক্রম : অভিজ্ঞতা প্রতিবেদন লেখা

শিখন প্রতিফলন

১. অষ্টশীল গ্রহণের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে লেখো।

 
 
 
 
২. অষ্টশীল গ্রহণের অভিজ্ঞতার অনুভূতি লেখো।
 
 
 
 
৩. অষ্টশীল পালনের ফলে তুমি কী সুফল পেয়েছ তা লেখো।
 
 
 
 

 

ফিরে দেখা: নিচের তালিকার সকল কাজ কি আমরা শেষ করেছি? হ্যাঁ হলে হ্যাঁ ঘরে এবং না হলে না ঘরে (√) চিহ্ন দাও:

অংশগ্রহণমূলক কাজ নং                                                 সম্পূর্ণ করেছি
হ্যাঁনা
১২  
১৩  
১৪  
১৫  
১৬  
১৭  
১৮  
১৯  
২০  
২১  
২২  
২৩  
২৪  

আর্য-অষ্টাঙ্গিক মার্গ করলে অনুসরণ, পাবো দুঃখমুক্ত সুখী জীবন।।

Content added By
Promotion